ডিভিডেন্ড (Dividend) অর্থ লভ্যাংশ। এক বছরে একটি কোম্পানির তার মুনাফার বা (ইপিএসের) যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের (বিনিয়োগকারীদের) মধ্যে বিতরণ করে তাকেই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড বলে। কখনো কখনো রিজার্ভ (সংরক্ষিত তহবিল) থেকেও লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। কোম্পানির আয় বা ইপিএস নেগেটিভ থাকলে ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদান করা যায় না তবে স্টক (বোনাস শেয়ার) লভ্যাংশ দেয়া যায়। লভ্যাংশের জন্য ঘোষিত রেকর্ড ডেটের (শেয়ারের মালিকানা নির্ধারণের দিনের) আগে শেয়ার কিনতে হয়।
লভ্যাংশ দুই প্রকার। ক্যাশ (নিজেস্ব মুদ্রায়) বা নগত লভ্যাংশ এবং স্টক (বোনাস শেয়ার) লভ্যাংশ। আবার একটি কোম্পানি ইচ্ছা করলে, লভ্যাংশ হিসেবে নগদ টাকা বা স্টক (বোনাস শেয়ার) অথবা উভয় আকারে দিতে পারে। লভ্যাংশকে সাধারণত শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়। লভ্যাংশ কোম্পানির ফেজভ্যালুর উপরে দেওয়া হয়। কোম্পানির সেকেন্ডারি মার্কেটে, কারেন্ট মার্কেট ভ্যালু যাই হোক না কেন?
বাংলাদেশে বর্তমানে সব কোম্পানির ফেজভ্যালু ১০ টাকা। মানে কোম্পানির কারেন্ট মার্কেট ভ্যালু ২০০০ টাকা হোক বা ২০০ বা ২০ টাকা হোক বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পাবে ফেজভ্যালু অর্থাৎ ১০ টাকার উপর। উদাহরণ-এবিসি কোম্পানি ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান মার্কেট ভ্যালু ২০০ টাকা । মানে ১০০টি শেয়ারে বিপরীতে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ ২৫০ টাকা পাবে। যদিও বর্তমান মার্কেট থেকে ১০০টি শেয়ার কিনতে তার খরচ হবে ২০০০০ টাকা।
স্টক লভ্যাংশের বেলায় একইভাবে লভ্যাংশ দেওয়া হয়, শুধুমাত্র ক্যাশ টাকা জায়গায় শেয়ার দেওয়া হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি বোনাস লভ্যাংশ হিসেবে পরিচিত। বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার কোম্পানির দায় বাড়ে। কোম্পানির ব্যবসা না বাড়লে ইপিএস কমে যায়, ফলে শেয়ার প্রেইজও কমে যায়। তবে ভাল আয় সম্পন্ন ফান্ডমেন্টাল কোম্পানির বোনাস লাভ জনক হতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ডের বেলায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ, বন্ড বা ডিবেঞ্চার থেকে প্রাপ্ত সুদ, ক্যাপিটাল গেইন থেকে অর্জিত মুনাফা, ব্যাংকে রাখা অর্থের সুদ ইত্যাদির সমন্বিত আয় থেকে লভ্যাংশ দেয়া হয়। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সাধারণত নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে সংশোধিত মিউচুয়াল ফান্ড আইন অনুসারে স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ আছে।
সাধারণতএকটি কোম্পানি তার মুনাফার পুরোটাই শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে না আবার চাইলে করতেও পারে। লভ্যাংশের একটি অংশ সংরক্ষিত তহবিল, ইকুয়ালাইজিং ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে জমা রাখে।একটি কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফার কতটুকু লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করবে সে বিষয়ে কোনো আইনী বাধ্যবাধকতা নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির নিজস্ব নীতিমালা ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত।
তবে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তাদের মুনাফার সর্বোচ্চ কত অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে তা বিএসইসি সময়ে সময়ে নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানে একটি মিউচুয়াল ফান্ড তার আয়ের সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে হিসেবে বিতরণ করার লভ্যাংশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অন্যদিতে বীমা আইন অনুসারে জীবনবীমা কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারে।
সাধারণভাবে সব শেয়ারহোল্ডারের জন্যই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। তবে কোন কোম্পানির বিতরণযোগ্য মুনাফা কম হলে পরিচালনা পরিষদ শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে। কোম্পানির বিতরণযোগ্য মুনাফা কম হলে মুনাফা হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় না। দ্রুত বর্ধনশীল বা উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন কোম্পানিতে অনেক সময় লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে অর্জিত মুনাফা কোম্পানির সম্প্রসারণে পুন:বিনিয়োগ করা হয়।
সাধারণভাবে ক্যাশ লভ্যাংশ প্রদান করা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা ভাল বলে ধরা হয়। নিয়মিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া এবং ভাল ডিভিডেন্ড ঈল্ডের কোম্পানিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করা ভাল। মাঝে মধ্যে স্টক ডিভিডেন্ড দিলেও সমস্যা নাই কিন্তু দেখতে হবে স্টক ডিভিডেন্ডের সাথে সাথে কোম্পানির আয় (ইপিএস) বাড়ছে কীনা? প্রতি বছর উচ্চ হরে শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া কোম্পানি এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া সাথে সাথে কোম্পানির আয় না বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানি শেয়ারের দাম পড়ে যায়।
Dividend yield (ডিভিডেন্ট ঈল্ড): সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য অনুপাতে ঘোষিত লভ্যাংশের হার। উদাহরণ সরুপ এবিসি কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ ক্যাশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একজন বিনিয়োগকারী যে দামেই শেয়ার কেনে-না কেন তিনি প্রতি শেয়ারের জন্য ৩ টাকা লভ্যাংশ পাবেন। কোন বিনিয়োগকারী যদি ১০০ টাকায় এ শেয়ার কিনে থাকেন তাহলে বিনিয়োগের বিপরীতে তার প্রকৃত লভ্যাংশ প্রাপ্তি (ডিভিডেন্ড ঈল্ড) হবে ৩ শতাংশ। ঘোষিত লভ্যাংশকে ১০০ দিয়ে গুণ করে বাজার মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ঈল্ড পাওয়া যায়।
ঘোষিত লভ্যাংশ * ১০০
সূত্র : ডিভিডেন্ড ঈল্ড = ——–——————————————
সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য
Cum-dividend (কাম-ডিভিডেন্ড): লভ্যাংশের জন্য ঘোষিত রেকর্ড ডেটের (শেয়ারের মালিকানা নির্ধারণের দিন) আগে শেয়ার কিনলে লভ্যাংশ প্রাপ্তির জন্য ঐ বিনিয়োগকারী যোগ্য বিবেচিত হয়। মোট কথা রেকর্ড ডেটের দিন যার পোর্টফোলিওতে শেয়ার থাকবে সে লভ্যাংশ পাবে। আইন অনুসারে প্রতিটি কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীর জন্য কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি, রাইট শেয়ার, বার্ষিক সাধারণ সভা বা বিশেষ সাধারণ সভায় যোগদানের সুযোগ লাভের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। যাকে রেকর্ড ডেট বলে।
রেকর্ড ডেটের আগের শেয়ারকে (শেয়ারের বাজার মূল্য কে) কাম-ডিভিডেন্ড শেয়ার বলা হয়।
Ex-dividend (এক্স-ডিভিডেন্ড): রেকর্ড ডেট পরবর্তী শেয়ার। যে সময়ে একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলেও লভ্যাংশ বা অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হন না। সে জন্য রেকর্ড ডেট পরবর্তী শেয়ারকে এক্স-ডিভিডেন্ড শেয়ার বলা হয়। এক্স-ডিভিডেন্ডে শোরের বাজার মূল্য ঘোষিত লভ্যাংশের সাথে সমন্বয়ে বাজারের সাপলাই ডিমান্ডের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
Dividend Equalization Fund: অনেক ভাল কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রতিবছরই নীট মুনাফা থেকে কিছু অর্থ আলাদা করে রাখে যা ডিভিডেন্ড ইকুয়ালাইজিং ফান্ড নামে পরিচিত। কখনো হঠাৎ ব্যবসা খারাপ গেলে তথা মুনাফা কম হলে অথবা লোকসানে পড়লে এ তহবিলের অর্থে লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়।