আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি প্রাইভেট কোম্পানি পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। আইপিও প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। আমাদের দেশের বাজারে আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগ নিরাপদ এবং এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর একটি ভালো রিটার্ন পেয়ে থাকে।
আইপিও কি?/ What is IPO?
Initial Public Offering (আইপিও) এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাইভেট কোম্পানি তার শেয়ারের একটি অংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। আইপিও শেয়ারগুলো প্রথমে প্রাইমারি মার্কেটে লেনদেন হয়। প্রাইভেট কোম্পানির ব্যবসায়ের মূলধন বৃদ্ধি করার জন্য আইপিও প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিকট নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে থাকে। আইপিও শেয়ারগুলি বিনিয়োগকারীদের বন্টনের পর তা সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন করা হয়ে থাকে। আইপিও সাধারণত দুই ধরনের হয়।
- Fixed Price Method
- Book Building Method
Fixed Price Method
ফিক্স প্রাইস মেথড এ আইপিও শেয়ার গুলির মূল্য ফিক্সট হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেই শেয়ারগুলোর মূল্য পরিবর্তন হয় না। আমাদের দেশে যে সকল কোম্পানির ফিক্স প্রাইস অফারিং এর মাধ্যমে শেয়ার মার্কেটে আসে সে কোম্পানির শেয়ার মূল্য 10 টাকা হয়ে থাকে। ফিক্স প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ার মূল্যের সাথে কোন প্রিমিয়াম যোগ হয় না।
Book Building Method
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিং এর মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য ঠিক করা হয়। এই পদ্ধতিতে যে সকল কোম্পানি শেয়ার বাজারে আসে সে কোম্পানির মূল্য বিবেচনা করে ইলিজিবল বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিডিং করে থাকে। তাদের বিডিং এর মাধ্যমে শেয়ারের প্রাইস ঠিক করা হয়। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ারের ফেইস ভ্যালু 10 টাকা থাকে এবং অতিরিক্ত টাকা শেয়ারের প্রিমিয়াম হিসেবে গণ্য হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডিং প্রাইসের থেকে 10% কমে শেয়ারের প্রাইস নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ কোন শেয়ারের মূল্য বিডিং এর মাধ্যমে 50 টাকা ঠিক হয় সে শেয়ারের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের 45 টাকা প্রদান করতে হবে।
কিভাবে আইপিও শেয়ারের জন্য আবেদন করবেন? How to Apply for IPO?
আইপিও শেয়ার আবেদন করতে হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয় এগুলো নিয়েই আমরা এখন আলোচনা করব।
বিও একাউন্ট খোলা
আইপিওতে আবেদন করতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নিবন্ধিত ব্রোকারেজ হাউসে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বিও অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি অনুসরণ করুন।
দেখুন : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরুর প্রক্রিয়া
সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ
আইপিওতে আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০,০০০ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। প্রতিটি আইপিও শেয়ার আবেদন শুরুর তারিখের ৫ কর্মদিবস আগে একটি কাট অফ ডেট নির্ধারণ করা হয়। ওই cut-off ডেটে আপনার বিও একাউন্টের ম্যাচিওর শেয়ারের মার্কেট প্রাইস সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা হলে আপনি আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন। Cut-off ডেটের পরে আপনি আপনি চাইলে শেয়ার গুলো বিক্রি করে দিতে পারবেন। আপনি কোন শেয়ার কতদিন পর ম্যাচিওর হয় তা জেনে 20000 টাকার কিছু বেশি টাকার শেয়ার কিনুন যাতে শেয়ারের দাম কিছু কমে গেলেও আইপিও আবেদন করতে আপনার কোন সমস্যা না হয়।
অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ ও টাকা জমা
এখন আপনাকে বোকারেজ হাউজ কর্তৃক নির্ধারিত আইপিও অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজকে জানালে তারা নিজেরাই আপনার হয়ে আইপিওর জন্য আবেদন করে দেয়। আপনি যত টাকার জন্য আইপিও আবেদন করবেন সেই টাকা আপনার বিও একাউন্টে থাকতে হবে। আপনি ১০/২০/৩০/৪০ বা সর্বোচ্চ 50 হাজার টাকার আইপিওর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আইপিও শেয়ার বন্টন
আইপিও শেয়ার আর আগের মত লটারির মাধ্যমে বন্টন করা হয় না। এখন যারা যারা আইপিওতে আবেদন করবেন তারা সকলেই কিছু না কিছু শেয়ার পাবেন আইপিও শেয়ার বন্টন হয় কোম্পানি কত টাকার শেয়ার বাজারে ছেড়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা মোট কত টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন এর অনুপাত এর ভিত্তিতে। সুতরাং আপনি যত টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন করবেন সেই অনুপাতে আপনি শেয়ার পাবেন আপনি যত বেশি টাকার শেয়ার এর জন্য আবেদন করবেন ততবেশি শেয়ার পাবেন। অর্থাৎ আপনি যদি 10 হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন করে 100 টি শেয়ার পান তাহলে 50000 টাকার শেয়ার এর জন্য আবেদন করলে 500 টি শেয়ার পাবেন।
IPO Share Distribution Quota
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী/ Institutional Investor — ৪০%
সাধারণ বিনিয়োগকারী/General Investor— ৪০%
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী/ Affected Investor— ১০%
প্রবাসী বিনিয়োগকারী/Non resident Investor—- ১০%
অর্থাৎ কোন কোম্পানির যদি 100 টি শেয়ার ছাড়ে তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে 40 টি, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে 40 টি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে 10 টি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে 10 টি শেয়ার বন্টন করা হবে।