ব্যবসার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বোনাস ইস্যু করা হয় বলে ভবিষ্যতে কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফার প্রবৃদ্ধির বেশ সম্ভাবনা থাকে।তবে মূলধন বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি মুনাফা না হলে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমে যেতে পারে।এমন অবস্থায় কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়ার সামর্থও কমে যায়।তাই পরিশোধিত মূলধন বেশি বাড়ানো দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে হুমকী তৈরি করে।
আমাদের দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন না হলেও অনেক সময় বোনাস ইস্যু করা হয়ে থাকে।আর এসব ক্ষেত্রে কিছু অসাধু উদ্যোক্তা নানা হীন উদ্দেশ্য থেকে এ পথ বেছে নেন।
প্রথমত:পুরনো ধ্যান ধারণার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ হিসেবে নগদ অর্থের চেয়ে বোনাসকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।ফলে ভাল বোনাস দিলে বাজারে সে কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে যায়।বেনামী শেয়ার ব্যবসা থেকে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্য থেকে অনেক ছোট ও স্থবির কোম্পানিও বোনাস ইস্যু করে থাকে।
দ্বিতীয়ত:অনেক সময় নগদ অর্থ হাতছাড়া না করার বাসনা থেকেও বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত:অনেক রুগ্ন কোম্পানির উদ্যোক্তারা কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিকে লাভজনক দেখিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে।পরবর্তীতে সে শেয়ার বাজারে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়।কিন্তু বাস্তবে কোম্পানিগুলো লোকসানি হওয়ায় এদের পক্ষে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব নয়।
কখনো কখনো কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদেরকে নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে শেয়ার অথবা একইসঙ্গে নগদ অর্থ ও শেয়ার দিয়ে থাকে।আমাদের বিনিয়োগকারীদের কাছে তা বোনাস লভ্যাংশ হিসেবে পরিচিত।
সাধারণত কোম্পানি তার ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনে সঞ্চিতির একাংশকে মূলধনে রূপান্তর করে।যে পরিমাণ অর্থ মূলধনে রুপান্তর করা হয় তার সমপরিমাণ অর্থের শেয়ার ইস্যু করা হয়।আর তা আনুপাতিক হারে বিতরণ করা হয় শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে।
ধরা যাক,একটি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা।আর তার শেয়ার সংখ্যা এক কোটি।কোম্পানিটির ৬ কোটি টাকার সঞ্চিতি আছে।কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সঞ্চিতি থেকে ৫ কোটি মূলধনে রূপান্তর করতে চায়। তাহলে কোম্পানিটিকে ৫০ শতাংশ হারে বোনাস ঘোষণা করতে হবে।এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে নতুন করে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করতে হবে।আর প্রত্যেক বিনিয়োগকারী বিদ্যমান দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটি বোনাস শেয়ার পাবেন।বোনাসের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ও পরিশোধিত মূলধন বেড়ে যায়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বছর শেষে তাদের বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। যে জন্য একবছর একটি কোম্পানির শেয়ার ধরে রাখতে হবে তা নয়। মূলত কোম্পানির রেকর্ড ডেটের (শেয়ারের মালিকানা নির্ধারণের দিনের) আগে শেয়ার কিনলে ঘোষিত যে কোন কোম্পানির লভ্যাংশ প্রাপ্তির যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবেন।
একটু আলোচনায় আসি। কর পরবর্তী মুনাফার পর কোম্পানিগুলো সেখান থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বিতরন করে থাকে। কেউ স্টক বা শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দিয়ে থাকে। আর কোন কোম্পানি নগদ বা টাকা মুনাফা হিসাবে দিয়ে থাকে। যখন কোন কোম্পানি বছর শেষে লাভ করতে পারে না তখন ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখার জন্য রিজার্ভ (সংরক্ষিত তহবিল) থেকেও লভ্যাংশ বিতরণ করে থাকে। তবে কোন কোম্পানির আয় বা ইপিএস নেগেটিভ থাকলে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে না স্টক বা বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে থাকে।
উদাহরন হিসাবে, “এ” কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করেছে এবং এর ফেজভ্যালু বা অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। কোম্পানির শেয়ার প্রতি দাম বর্তমানে ২০০ টাকা হলেও বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ দেয়া হবে ১০ টাকার উপর। এ হিসাবে ১০০টি শেয়ারে বিপরীতে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ ৭০ টাকা।