অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে প্রতিদিন শেয়ারবাজারে গুরুত্ব বাড়ছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের মূলধন মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ। আর সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
ইলেট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএলের তথ্য মতে, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২৭ লাখ ১২ হাজার। আর প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে।
তবে বিশাল অঙ্কের এ বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগেরই শেয়ারবাজার সম্পর্কে ধারণা নেই। মূলধন হারিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজার বিনিয়োগ বললেই মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক চলে আসে।
তাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস। ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিসের মধ্যে কোম্পানির মৌলভিত্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস কোম্পানির শেয়ারের মুভমেন্ট বলে দেবে। এভাবে বিশ্লেষণ করে বাজারের ভালো শেয়ার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
শক্তিশালী মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ শেয়ারের বেশ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রথমত শেয়ারের সম্পদ মূল্য দেখতে হবে। সংক্ষেপে বলা হয়, নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) প্রকৃত সম্পদ মূল্য ভালো শেয়ার সম্পদ মূল্য বেশি থাকে।
দ্বিতীয় শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস। একটি কোম্পানি প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে কী পরিমাণ আয় করছে, বিনিয়োগের জন্য তা অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। এরপর শেয়ারের মূল্য ও আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও) : কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় এবং শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্যের অনুপাত। এটি বাজারের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। এ অনুপাত যত কম, শেয়ার তত ঝুঁকিমুক্ত।
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের অন্যতম আরেক মাপকাঠি হল কোম্পানির লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। এ লভ্যাংশ কখনও নগদ বা বোনাস শেয়ার হতে পারে। তবে ভালো কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশ বেশি দেয়।
এ ছাড়া রয়েছে কোম্পানির বুক ভ্যালু ও প্রবৃদ্ধির হার। অন্যদিকে কোম্পানির উদ্যোক্তা হিসেবে কারা রয়েছে, তাদের পেছনের রেকর্ড অবশ্যই বিনিয়োগের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে।
বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির মাত্রা কম থাকবে সেটি কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ করে জানতে হবে। এর মধ্যে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল এনালাইসিস করতে হবে। কোন কোম্পানি আর্থিকভাবে কত বেশি শক্তিশালী তা কোম্পানির মৌলভিত্তি দিয়ে জানা যাবে।
যে কোম্পানির শেয়ার কেনা হবে, তার বর্তমান আয়, বার্ষিক আয়, কোম্পানি নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা, কোম্পানির পণ্য সরবরাহ কেমন, নেতৃত্বে কারা আছে, কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কেমন এবং সবশেষে ওই কোম্পানির পণ্যের বাজারে
চাহিদা কেমন আছে। যিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী তার প্রথম কাজ হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেয়া। প্রতিটি কোম্পানি প্রতি বছর বার্ষিক আয় -ব্যয় সংবলিত একটি প্রতিবেদন পেশ করে। ওই প্রতিবেদন সংগ্রহ করে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে।
শেয়ারবাজারের কয়েকটি টার্ম
প্রাইমারি : প্রাইমারি শেয়ার হল কোম্পানি শেয়ার ছেড়ে সরাসরি জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের মূলধন বাড়ায়। বাজারে মূলধন বাড়াতে ইচ্ছুক এমন কোম্পানি একটি ইস্যু ম্যানেজারের মাধ্যমে তাদের কোম্পানির আরেকজন অংশীদার হওয়ার জন্য জনগণের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে এবং জনগণ কোম্পানির অ্যাকাউন্টে আবেদনকৃত অর্থ জমা দেয়।
সেকেন্ডারি : শেয়ারের ক্রেতা এবং বিক্রেতার সমন্বয়ে সেকেন্ডারি মার্কেট গঠিত হয়। একজন বিনিয়োগকারী প্রাথমিক শেয়ার লাভ করার পর তা বিক্রি করতে চাইলে তা সেকেন্ডারি মার্কেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে।
ইপিএস : শেয়ারপ্রতি নিট মুনাফা বোঝায়। যেমন শেয়ারপ্রতি আয় বের করতে হলে কর বাদে কোম্পানির নিট মুনাফাকে মোট সাধারণ শেয়ার দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ডিভিডেন্ড : এটি কোম্পানি কর্তৃক প্রতি শেয়ার মূল্যের ভিত্তিতে বিতরণকৃত লভ্যাংশকে বোঝায়। যে কোম্পানি বেশি লভ্যাংশ দেয় সেই কোম্পানির শেয়ার তত বেশি ভালো।