শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সূচক দেখবেন নাকি কোম্পানির বিভিন্ন অনুপাত দেখবেন। সূচক দেখে বাজার সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত নয়। বাজার সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে দেখতে হবে কোম্পানির বিভিন্ন অনুপাত।
১। EPS: EPS হল একটি কোম্পানির লাভের অংশ যা সাধারণ স্টকের প্রতিটি শেয়ারে বরাদ্দ করা হয়। EPS একটি কোম্পানির লাভের সূচক হিসাবে কাজ করে।
EPS কেন গুরুত্বপূর্ণঃ ইপিএস কোন কোম্পানির শেয়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। কোন কোম্পানির ইপিএস যত বেশি থাকবে বুজতে হবে ওই কোম্পানিটি তত বেশি লাভজনক হোল্ডারদের জন্য।ইপিএস কোয়াটার্লি ব্যসিসে প্রকাশ করা হয়।
শেয়ার প্রতি আয় (Earning per share তথা EPS)
এটি শেয়ার প্রতি নীট মুনাফার পরিমান নির্দেশ করে যা নিম্নোক্ত পন্থায় নির্ণয় করতে হয়-
ধরি, XYZ কোম্পানির কর বাদে নীট মুনাফা ৫০,০০০ টাকা এবং মোট সাধারন শেয়ারের সংখ্যা ১০০,০০ টি। অতএব সূত্র মতে কোম্পানির EPS দারাবে।
শেয়ার প্রতি আয়(EPS)=কর বাদে নীট মুনাফা/মোট সাধারন শেয়ারের সংখ্যা
শেয়ার প্রতি আয়=৫০,০০০/১০০,০০
শেয়ার প্রতি আয়=.৫০
২। P/E RATIO: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক P/E RATIO অর্থাৎ মূল্য আয় অনুপাত। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন, সাধারণত যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম, সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগে ঝুঁকিও তত কম।
P/E RATIO এর গুরুত্বঃ P/E অনুপাত বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির উপার্জনের তুলনায় একটি স্টকের বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।একটি উচ্চ P/E এর অর্থ হতে পারে যে একটি স্টকের মূল্য উপার্জনের তুলনায় উচ্চ এবং সম্ভবত অতিমূল্যায়িত। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সিধান্ত নিতে সহায়তা করে।
মূল্য আয় অনুপাত (Price-Earnings Ratio তথা P/E Ratio) যা নিম্নোক্ত পন্থায় নির্ণয় করতে হয়-
ধরি, XYZ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় .৫০ পয়সা এবং বর্তমান বাজার মূল্য ২৫ টাকা। অতএব এই ক্ষেত্রে XYZ কোম্পানির P/E Ratio হবে্।
মূল্য আয় অনুপাত(P/E RATIO)= প্রতি শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য/ শেয়ার প্রতি আয়
মূল্য আয় অনুপাত= ২৫/.৫০
মূল্য আয় অনুপাত= ২৫/.৫০
মূল্য আয় অনুপাত=৫০
৩. Dividend Yield : কোম্পানির যে পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে (ফেস ভ্যালুর উপর ডিভিডেন্ড দেয়) তা বর্তমান বাজার মূল্যের কত অংশ তাকেই ডিভিডেন্ট ঈল্ড বলা হয়।
Dividend Yield এর গুরুত্বঃ
বাংলাদেশের পুজিবারের প্রেক্ষাপটে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানির গুরুত্ব অনেক বেশি। কারন এখানে ভাল কোম্পানি তাদের শেয়ার বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক না, তাই তারা সব সময় ক্যাশ দিয়ে থাকে। আবার এই সব কোম্পানির শেয়ারের দামের মধ্যে পরিবর্তন খুব বেশি থাকে না। যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুকি মুক্ত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তারা ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানিগুলোর দিকে বেশি খেয়াল রাখে। এদের মধ্যে যে সব কোম্পানির Dividend Yield বেশি এবং প্রায় সব সময় ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমের দিকে আসলেই তারা তাদের পোর্টফলিওতে এই শেয়ার কিনে থাকেন। কারন কম দামে কিনতে পারলে ঈল্ড বেশি পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে দেখা যায় বাংলাদেশের পুজিবারের অপেক্ষাকৃত খারাপ পার্ফম করা কোম্পানিগুলো স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে, লাভের সম্পুর্ন অংশ কোম্পানিতে রেখে দেয় পুঃণরায় বিনিয়োগ করার জন্য। যেখানে কোম্পানির শেয়ার ভ্যালু বৃদ্ধি হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের মার্কেটে ভ্যালু আরো কমে যায়। কারন এসব কোম্পানি এই টাকাকে ভাল ভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
আমাদের দেশেও কিছু ব্যতিক্রম শেয়ার রয়েছে, যারা খুব ভাল পার্ফম করে। তারা ভাল লাভ করে, কিন্তু কোম্পানির গ্রোথের জন্য শেয়ার হোল্ডারদের লাভের কিছু অংশ ক্যাশ হিসাবে দেয় এবং বেশির ভাগ অংশ পুঃণরায় ইনভেস্ট করে। এসব কোম্পানির গ্রোথ রেটও ভাল এবং এসব কোম্পানির উপর ইনভেস্টোরদের আগ্রহ বেশি থাকে।
Dividend Yield ই শেয়ারের সঠিক return নির্দেশ করে, যা নিম্নোক্ত পন্থায় নির্ণয় করতে হয়-
ধরা যাক-এবিসি কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ২৫ টাকা।এবং যার ভেস ভ্যালু ১০ টাকা। কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একজন বিনিয়োগকারী যে দামেই শেয়ার কেনে-না কেন তিনি প্রতি শেয়ারের জন্য ৩ টাকা লভ্যাংশ পাবেন।
লভ্যাংশ আয়(Dividend Yield)= শেয়ার প্রতি ডিভিডেন্ড/ প্রতি শেয়ারের বাজার মূল্য
লভ্যাংশ আয়= ৩/২৫
লভ্যাংশ আয়=.১২*১০০
লভ্যাংশ আয়=১২%
৪.NAV:একটি মিউচুয়াল ফান্ডের কোনও নির্দিষ্ট স্কীমের পারফর্ম্যান্সকে নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) দ্বারা সূচিত করা হয়। সহজ ভাষায়, NAV হল একটি স্কিমে যে পরিমাণে বাজার মূল্যের সিকিউরিটি থাকে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ সিকিউরিটিজ মার্কেটে বিনিয়োগ করে। যেহেতু সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য প্রতি দিন পরিবর্তিত হয়, তাই একটি স্কিমের NAV-ও প্রত্যেক দিন পরিবর্তিত হতে থাকে। একটি স্কিমের সিকিউরিটিগুলির বাজার মূল্যকে কোনও নির্দিষ্ট তারিখে স্কিমের ইউনিটগুলির মোট সংখ্যা দ্বারা বিভাজিত করলে NAV এর প্রতি ইউনিট পাওয়া যায়।
NAV এর গুরুত্বঃ এটি শেয়ার প্রতি কোম্পানির নীট সম্পদের মূল্য প্রদর্শন করে যা কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত মূল্যের পরিচায়ক। নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে লাভ অথবা লোকসান নিয়ে ফান্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা থাকে তহবিলের প্রত্যেক সদস্যেরই। একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড শুরু হওয়ার পর নিয়মিত শেয়ারের কেনা-বেচা চলতে থাকে। আর ফান্ডের শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য একটা পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। মূল্য নির্ধারণের এই পদ্ধতি নির্ভর করে NAV-র উপর।
NAV নিম্নোক্ত পন্থায় বের করা যায়-
ধরি, দিনের শেষে একটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ করা সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য হল ১০০ কোটি টাকা।তহবিলে হাতে রয়েছে ৫ কোটি নগদ এবং অবন্টিত লভ্যাংশ হল ২ কটি টাকা। সাধারন শেয়ারের সংখ্যা ৩ কোটি। তাহলে NAV হবে…
শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ(NAV)=সাধারন শেয়ার মূল্য+রিজার্ভ+অবণ্টিত মুনাফা/সাধারন শেয়ার সংখ্যা
শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ=১০০+৫+২/৩
শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ=৩৫.৬৭
৫.ROE Ratio:অনুপাত আর্থিক কর্মক্ষমতা একটি পরিমাপ যা শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি দ্বারা ভাগ করে নিট আয় হিসাবে গণনা করা হয়। এটি বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর প্রাপ্তির হার নির্দেশ করে।
নিম্নক্ত উপায়ে আমরা কিভাবে ROE Ratio ক্যালকুলেট করব…
ধরি, XYZ কোম্পানির নীট মুনাফা ১৫,০০০ টাকা এবং ইক্যুইটি ৫০,০০০ টাকা সুতরাং
মূলধন প্রপ্তির হার= নীট মুনাফা/ ইক্যুইটি
মূলধন প্রপ্তির হার= ১৫,০০০/৫০,০০০
মূলধন প্রপ্তির হার= .৩০
৬.Debt On Equity : Debt On Equity (D/E) অনুপাত একটি কোম্পানির আর্থিক লিভারেজ মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয় এবং একটি কোম্পানির মোট দায়গুলিকে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি দ্বারা ভাগ করে গণনা করা হয়।
Debt On Equity এর গুরুত্ব ঃ আমরা ইক্যুইটি অনুপাত থেকে ঋণের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করব৷ ঋণ থেকে ইক্যুইটি অনুপাত আমাদের কোম্পানির আর্থিক লিভারেজ বুঝতে সাহায্য করে৷ এটি লিভারেজ অনুপাতের বিভাগের অধীনে অনুপাত বিশ্লেষণের অংশ। এই অনুপাতটি পরিমাপ করে যে কোম্পানির ক্রিয়াকলাপগুলির কতটা ইক্যুইটির তুলনায় ঋণ দ্বারা অর্থায়ন করা হয়, এটি শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটির বিপরীতে কোম্পানির সম্পূর্ণ ঋণ গণনা করে। ঋণ থেকে ইক্যুইটি অনুপাত কোম্পানির মূলধন কাঠামোকে প্রতিফলিত করে এবং বন্ধ করার ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণ শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটির মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে কি না তা বলে।
ঋণ থেকে ইক্যুইটি অনুপাত দেখায় কোম্পানির মূলধন কাঠামো এবং এর কত অংশ ঋণ দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল (ব্যাংক ঋণ, ডিবেঞ্চার, বন্ড, ইত্যাদি) বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের তহবিল অর্থাৎ ইক্যুইটির সাথে তুলনা করে। উচ্চ ঋণ থেকে ইক্যুইটি অনুপাত কোম্পানির ক্রিয়াকলাপে ঋণদাতার অর্থায়নের উচ্চ স্তর। যদি একটি ব্যবসা ইক্যুইটি অনুপাতের সাথে উচ্চ ঋণ সম্পাদন করতে অক্ষম হয় তাহলে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। যাইহোক, ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ অর্থায়ন প্রসারিত করতে চায় সহায়ক এবং সহজ হতে পারে.
এটি একটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মূলধন ও ঋণের হার নির্দেশ করে-
ধরি, XYZ কম্পানি মোট মূলধন ৬০,০০০,০০০ এবং ব্যাংক লোণের পরিমাণ ৫০,০০,০০০ সুতরাং লোন ও মূলধনের অনুপান……
ঋণ মূলধন অনুপাত= ঋণ/ ইক্যুইটি
ঋণ মূলধন অনুপাত=৫০,০০,০০০/৬০,০০০,০০০
ঋণ মূলধন অনুপাত=.০৮*১০০
ঋণ মূলধন অনুপাত=৮%