Categories
জিজ্ঞাসা

কী কারণে শেয়ার ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি?

এমন একটি ব্যবসার কথা চিন্তা করুন যে ব্যবসাতে দৈনিক এক ঘণ্টারও কম সময় ব্যয় হয়, যে ব্যবসায়ের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন নেই, যে ব্যবসা অপেক্ষাকৃত কম সময়ে শেখা যায় এবং যেখান থেকে নিয়মিতভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব, তাহলে এমন একটি ব্যবসা অপেক্ষা ভালো ব্যবসা কি অন্য কোথাও রয়েছে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিমাসে প্রচুর মানুষ এই ব্যবসাতে ঝুঁকে পড়ছেন পূর্ণ কিম্বা খণ্ডকালীন ব্যবসায়ী হিসেবে এবং অনেকে প্রচুর অর্থও উপার্জন করছেন। এমনকি শেয়ার ব্যবসা বিষয়ক জ্ঞান নেই এমন অনেকেও নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সফল শেয়ার ব্যবসায়ী হয়ে উঠছেন। কেন শেয়ার ব্যবসায়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ সে বিষয়েই নিম্নে আলোচনা করা হল।

মনে করা যাক, আপনার দশ লাখ টাকা পুঁজি আছে। একটি লাভজনক শিল্প কারখানা স্থাপন বা অন্য কোনো লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনি উক্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু টাকা খাটানোর জন্য যে সময় ও শ্রম দেয়ার প্রয়োজন তা আপনার নেই।অথবা দেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনি বাস করছেন যেখানে সম্ভাবনাময় শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যায় না। বাজারও সীমিত। দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে, শিল্প কারখানা পরিচালনা করার জন্য, পণ্য বিক্রির জন্য যে ঝামেলা রয়েছে তাও আপনার জন্য প্রীতিদায়ক নয়। আপনার এলারকার কিছু ব্যক্তি তাদের সঞ্চিত পুঁজি বিনিয়োগ করে ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন, কেউ কেউ রাইস মিল কিম্বা হালকা প্রকৌশল কারখানা স্থাপন করেছেন। কিন্তু বীব্র  প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য বহুবিধ কারণে ওই সব ব্যবসা থেকে সন্তোষজনক আয় আসছে না। কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়েছে। কিছু ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমসমূহেও আপনি টাকা খাটাতে আগ্রহী নয়েন। কারণ দীর্ঘদিন পরে টাকা ফেরত পাওয়ার সময় মুদ্রাস্ফীতির কারণে ওই টাকার প্রকৃত মূল্য বা ক্রয় ক্ষমতা কমে আসবে। ব্যাংক আমানত থেকেও অপেক্ষাকৃত অনেক কম হারে সুদ পাওয়া যায়। তােই আপনি অপেক্ষাকৃত ভালো বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন। উপরন্তু মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর জমিজমা, বাড়িতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে কেউ কেউ আগ্রহী থাকেন না। আমরা জানি বিনিয়োগকারীদেরও শ্রেণিভাগ আছে। যারা জমিজমা, বাড়ি ক্রয়ে আগ্রহী না হয়ে বিভিন্ন আর্থিক হাতিয়ারে (শেয়ার, সঞ্চয়, প্রকল্প ইত্যাদি) বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তারাই আমাদের আলোচনার লক্ষ্যবিন্দু।

এমতাস্থায়, মনে করা যায়, একই সময়ে স্ব স্ব পেশাতে স্বনামধন্য কয়েক ব্যক্তি কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রপ্তানিমুখী অতি সম্ভাবনাময় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে যাচ্ছেন। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটি থেকে বাৎসরিক গড় আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০%। নিজ উদ্যোগে সীমিত সামর্থে কোনো ব্যবসা শুরু করে বর্তমান সময়ে ওই পরিমাণ লাভ পেতে থাকবেন এমন প্রস্তাবের ভিত্তিতে যদি প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার অংশ আপনাকে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে এর চেয়ে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ আপনার জন্য আর কিইবা হতে পারে। উপরন্তু শেয়ারের দর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হলে অতি অল্প সময়ে ওই শেয়ার বা মালিকানার অংশ বিক্রি করে দিয়ে মূলধনী লাভ অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।অপরদিকে স্ব উদ্যোগে স্থাপিত স্থাপিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান অলাভজনক প্রতীয়মান হওয়া সত্ত্বেও জমি, কারখানাঘর, যন্ত্রপাতি ও মজুদ মালামাল বিক্রি করে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না। অথচ তালিকাভুক্তি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে সহজে বেরিয়ে আসা সম্ভব। অন্যান্য প্রয়োজনেও আপনি তাৎক্ষনিকভাবে মালিকানার অংশ বা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নগদ অর্থ হাতে পেতে পারেন। সেকেন্ডারি বাজার থেকে শেয়ার ক্রয় করে লাভ, লভ্যাংশ বা অন্যান্য প্রাপ্তির সুযোগ থাকে। শেয়ার থেকে প্রাপ্ত গড় লাভ অপেক্ষা বেশি লাভ অন্য কোনো বিকল্প বিনিয়োগের সূত্র থেকে পাওয়া দুষ্কর।

শেয়ার ব্যবসা অধিকতর আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ হিসেবে যেসব বিষয় চিহ্নিত করা যায় সেগুলো নিম্নরূপ:

১. সঠিক শেয়ারে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে এমনকি মাঝে মধ্যে মাত্র কয়েকদিনের বা সপ্তাহের ব্যবধানে সন্তোষজনক, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আশাতীত লাভ অর্জন করা সম্ভব হয়। লাভ আসে বিভিন্নভাবে-

ক)মূলধনী লাভ বা কম দামে শেয়ার ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রিজনিত লাভ।

খ) লভ্যাংশ;

গ)বোনাস শেয়ার বা অন্যান্য প্রাপ্তি।

২. স্বল্প মূলধনে, বিনা দক্ষতায় অনেক নামিদামি কিম্বা দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদারিত্ব অজর্নন করে বিনাশ্রমে ব্যবসায়ের লভ্যাংশ ভোগ করার সুযোগ।

৩)স্বল্প শ্রম ও স্বল্প মূলধনে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অপেক্ষকৃত অনেক বেশি লাভ অর্জন করা।

৪) নিজ উদ্যোগে শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে এমনকি লাভ অর্জনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও সহসা কারখানা ঘর, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে ওই ব্যবসা ত্যাগ করে নতুন সম্ভাবনাময় শিল্পে মূলধন স্থানান্তর করা সম্ভব হয়না। কিন্তু এই বিরল সুযোগ শেয়ার ব্যবসাতে রয়েছে।

৫)সিঙ্গার কোম্পানিতে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ বছরে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬০ টাকা প্রাপ্তির (অতি রক্ষণশীল হিসাব)বিষয়টি বিবেচনা করুন। এমন যুযোগ শেয়ারবাজারে পুনরায় আসবে না এ ধারণার ভিত্তিতে হয়তোবা অনেকে এ উদহারনটিকে গুরুত্ব দেবেন না। তবে সিঙ্গারের সফলতার আলোকে এদেশের অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষেত্র অপেক্ষা বেশি লাভ অর্জনের জন্য সম্ভাবনাময় শেয়ার যারা খুঁজে পাবেন তাদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠতম স্থান হলো শেয়ারবাজার।

৬) যে কোনো জরুরি মুহূর্তে আংশিক বা সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রয় করে দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে পাওয়ার নিশ্চয়তা ইত্যাদি।

ঝুঁকি !!!

যে বিষয়টি অনেকের জন্য আশ্চর্যজনক সেটি হচ্ছে,অনেকে যেমনটি মনে করেন শেয়ার ব্যবসাতে ঝুঁকির মাত্র তেমন বেশি নয়!!! শেয়ারের উচিত দর জানা সম্ভব হলে এবং সঠিক সময়ে উচিত দরে শেয়ার ক্রয় করা সম্ভব হলে ঝুঁকির মাত্রা অতি নগন্য !!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *